রাজধানীসহ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে তীব্র আইসিইউ সঙ্কটে দিশেহারা রোগী ও স্বজনরা।
রাজধানীসহ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে তীব্র আইসিইউ সঙ্কটে দিশেহারা রোগী ও স্বজনরা। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে তাই যেকোনো মূল্যে বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে ঠাঁই করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এতে অর্থক্ষতির সঙ্গে অনেক সময় রোগী পাননা কাঙ্ক্ষিত সেবা। সঙ্কট সমাধানে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিটি জেলায় অন্তত পাঁচটি করে আইসিইউ শয্যা নির্মাণের আশ্বাস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি সরকারি হাসপাতালের মোট বেডের ১০ ভাগ আইসিইউ বেড থাকার কথা থাকলেও সাড়ে আট'শ বেডের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের রয়েছে মাত্র ১০টি। এর মধ্যে একটি সাড়ে ৮ মাস ও অপর একটি দীর্ঘ দেড় বছর থেকে খালি হয়নি। এছাড়াও আইসিইউ বেড না পেয়ে কত সংখ্যক মানুষ যে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে তার কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই কারো কাছেই।
ভুক্তভোগী এক শিশু সন্তানের বাবা জানান, আমার বাচ্চাকে বাঁচানো জন্য আমি পাগলের মতো আইসিউতে খুঁজেছি পুরো ঢাকা শহর।
এক নারী জানান, একটা আইসিইউ একটা রোগীর জীবন নয়, একটা আইসিইউে শত শত মানুষের মানুষের জীবন। তাই প্রত্যেকটা হাসপাতালে আইসিইউ সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আমার হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা দশটা। আর এটা যদি ৫০ শয্যার হয়, তারপরও সংকুলান করা সম্ভব নয়।
দেশের ১৮ টি সরকারী জেলা হাসপাতালে নেই কোন আইসিইউ ইউনিট। রাজধানীসহ প্রতিটি জেলাতেই তীব্র আইসিইউ সঙ্কট থাকায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছেন রোগীরা।
এতে শুরুতেই লাখ লাখ টাকা শেষ হওয়ায় পরবর্তীতে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খরচ চালানোর সামর্থ্যও থাকছে না অনেকের। এরপরও এই সোনার হরিণ যাদের ভাগ্যে জুটছে তাদেরও ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
আইসিইউ রোগী নিয়ে ভোগান্তি পড়া এক ব্যক্তি জানান, যাদের ভাল কোন লবিং, নেতা-কর্মী আছে তারা ৪-৫ দিন পর তারা সিট পায়।
অন্য আরেকজন জানান, ঢাকা শিশু হাসপাতালে আইসিইউতে বেড না পেয়ে আমি প্রাইভেট যাই। সেখানে আমি আমার সব শেষ করে দিয়েছি। পরে কোন রকমে বাচ্চার জান নিয়ে এখানে এসেছি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, শুধু শিশু হাসপাতালে নয়, সারা বাংলাদেশসহ ঢাকা শহরে আইসিইউ ও এনআইসিইউ সংকট প্রকট। অতি দ্রুত এর সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
এদিকে দ্রুত শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সীমাবদ্ধ শয্যা বণ্টনে আরও সতর্ক না হলে অনেককেই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না মত বিশেষজ্ঞদের।
আইসিইউ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম কামরুল হুদা বলেন, কিছু অবাঞ্চিত রোগীর চাপ আমাদের এখানে আসে। এই রোগীগুলো যখন চিকিৎসা দিয়ে ভাল করা যায় না। সেই সাথে মৃত্যু সংখ্যাটাও বেড়ে যায়। যাদের বয়স কম, চিকিৎসা দিয়ে ভাল করার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরকে বাচাই করা উচিত।
এদিকে দেশের সবকটি জেলায় আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করতে আরও ৪টি বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পরিচালক অধ্যাপক ডা.কাজী জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে আমাদের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের প্রত্যেকটা জেলা সদর হাসপাতালে কম পক্ষে ৫টি আইসিইউ বেড করা হবে।
আইসিইউ সেবা নিশ্চিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা জনবল। তাই এখন থেকেই দক্ষ চিকিৎসক ও নার্স তৈরিতে জোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।